মানুষ স্বপ্ন দেখে, বিশ্বাস করে, আপনিও হয়তো স্বপ্নে বিভোর হয়ে যেতে পারেন, বা লোভের চক্রে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে পারেন ভুলবশত। যেখান থেকে চাইলেও বের হতে পারবেন না একবার ঢুকে গেলে। তাই আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করে সাবধানে পথচলা নিশ্চিত করাটা গুরুত্বপূর্ণ নয় কি? । স্বপ্ন কে কখন কাকে কেনো দেখায়? সেই প্রশ্নের উত্তর সবসময় না খুজলেও কিছু সময় সেটা বুঝতে হয়, খুজতে হয়। যখন নিজের ব্যক্তি জীবনের পরবর্তী সময়ের দৃশ্য কেমন হবে সেই স্বপ্নের ফাঁদে পা দেয়ার পরে, সেটা ভাবতে গেলে। আপনি যে স্বপ্নটা দেখতে যাচ্ছেন, সেটা অন্য কেউ পূরণ করে দিবে ব্যক্তি স্বার্থ ছাড়া? হয়তোবা আপাতদৃষ্টিতে তা মনে হতেই পারে। কিন্তু আমরা অনেক ধরণের অদৃশ্য খরচের কথা জানি, যেসব আমাদের কল্পনায় ছিলোনা, বা চিন্তাও করিনাই। তবুও সেসব হয়ে যায়। তেমনি, আপনাকে ফাঁদে ফেলার জন্য যত ধরণের মিষ্টি প্রলোভন আছে, সবকিছুই উপস্থাপিত হবে খুব সুন্দরভাবে। যখন এসব চাকচিক্যের দৃশ্য সামনে ভেসে উঠে, কাল্পনিক কিংবা বাস্তবে, মানুষের মস্তিস্ক ডোপামিন নিঃসরণ করে সুখের, আকাঙ্খার, পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। তখনি কেউ কাউকে খুব দ্রুতই সেই অন্ধকার ট্রাপ ফাঁদ জগতের প্রবেশদ্বারে প্রবেশ করাতে সক্ষম হয়!
আর একবার কেউ যখন নিজের গতিপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়, তখন সেটা রেললাইন থেকে ট্রেনের ছিটকে পড়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি করাটা খুব বেশি অবাক করার বিষয় হয়না। বরং দূর্ঘটনা বরণ করার জন্যই সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে হয়।
স্বপ্নের সিড়ি বেয়ে আকাশ ছুয়ে আসুন। সিড়িটা যেনো দ্রুতগতির না হলেও স্ট্যাবল হয়। যেখানে কনফিডেন্স থাকে। ভেঙে যাওয়ার ভয় না থাকে।
আমরা ছোটবেলায় মাছ শিকার করতাম, মাছকে ফাঁদে ফেলার জন্য বর্শীতে যে খাবার ব্যবহার হতো তা অনেকসময়ই মিষ্টি জাতীয় খাবার। তেলাপোকা ,ইদুর মারার জন্য খাবারে বিষ মিশানো, আর সেসব খাবার ও যে মিষ্টি জাতীয় খাবার থাকতো।
এসব ছোট ছোট বিষয় বলার উদ্দেশ্য একটাই- পৃথিবীতে এ যাবতকাল যত ধরণের বড় বড় প্রতারণামূলক অপরাধ কর্ম সংঘটিত হয়েছে। তার প্রত্যেকটার সাথে কয়েকটি জিনিসের সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। এম এল এম বিজনেস সম্পর্কে যাদের আইডিয়া আছে, তাদের এ বিষয়টা বুঝতে সুবিধা হবে খুব দ্রুত। আর একটু সুক্ষ্মভাবে চিন্তা করলে সাধারণ যে কেউ বুঝতে পারবে।
যে জিনিসগুলোর জন্য মানুষ ফাঁদে পড়ে, ফাঁদে ফেলতে পারে। প্রতারণার জন্য একটা রাস্তা তৈরি করতে পারে।
তা হলো-
স্বপ্ন দেখানো/ চাকচিক্যময় স্বপ্ন।
লোভ, চাকচিক্যময় স্বপ্নের লোভে পড়া।
অন্ধবিশ্বাসের মতো কঠিন রোগ।
একটু চিন্তা করলেই দেখবেন। আমাদের আশেপাশে প্রতিনিয়তই দেখি, নিউজপেপার পড়ে জানতে পারি। কত ধরণের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। একটা স্কুল বাচ্চাকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে বাসায় নিয়ে **** করেছে অমুক। এটা একটা অপরাধ। এটা যে ঘটিয়েছে তার পেছনের গল্পতে আমি যেতে চাচ্ছিনা।
আমি শুধুমাত্র এই অপরাধটা সফলভাবে সংঘঠিত হবার পেছনের একটা কারণ দেখতে পাচ্ছি। সেটা হলো “লোভ” । একজন লোভ দেখিয়েছে, ভিকটিম সেই লোভে পড়েছে। এরপর অপরাধী তার চরিতার্থ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।
এটাও বাদ দিলাম। এরপরে আমাদের সামনে আসে আধুনিক সময়ের অনেক ধরণের প্রতারণার ফাঁদ। আমরা সেসবে জড়িয়ে যাচ্ছি ভিকটিম হিসেবে। কেউ আমাদেরকে বললো একবছরের মধ্যে আপনি কোটিপতি হবেন, শুধুমাত্র এক্স এমাউন্টের কিছু টাকা দিয়ে। যা আপনার সাধ্যের মধ্যেই থাকবে। এবং আপনি আমি সেই ফাঁদে পড়ে তাদের দেখানো পথে পা বাড়াই। একটা সময় গিয়ে দেখা গেলো যা যা তারা বলেছে, তারা আমাদেরকে দেখায় স্বপ্ন, আমরা লোভের আগ্রাসনে আটকে যাই। লোভ আর স্বপ্নের কম্বিনেশনে আবারো একটা প্রতারণামূলক অপরাধ সংঘটিত হয়। আল্টিমেট বিষয়টার সামারি আপ করলে আমরা দেখতে পাই- যেকোন আপরাধ সংঘঠিত হবার জন্য বেশ কয়েকটি বিষয় একত্রে কাজ করে।
ব্যক্তিস্বার্থ কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ।
স্বপ্ন, আর লোভ।
ব্যক্তিস্বার্থ কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ: এই স্বার্থ জিনিসটা আমাদেরকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। যা আমরা হয়তো কখনো ঠান্ডা মাথায় চিন্তাও করিনা। আমরা অন্ধভাবে হোক, ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক। কেবলমাত্র চাই- আমাদের ভালো হোক, আমাদের উন্নতি হোক, আমাদের সব হোক। মোটকথা “আমাদের হোক” এই বৃত্তের মধ্যে আটকে থাকি। যখন শুধুমাত্র আমাদের মধ্যেই আটকে থাকি। তখন আসলে অন্যদের কি হবে, হচ্ছে, সেই ব্যাপারে ভাবার খুব একটা আগ্রহ থাকেনা। অন্যের ক্ষতি হোক কিংবা কষ্ট হোক। এসবে আমাদের কোনো মাথাব্যথা হয়না। আমরা নিজেদের অজান্তেই হয়ে উঠি মানুষের মাঝেই এক ধরণের হিংস্র মানুষ।
স্বপ্ন দেখার কোনো লিমিটেশন নাই। কথাটা যুক্তিযুক্ত থাকলেও স্বপ্ন দেখার কিছু ক্রাইটেরিয়া আছে। যা আমাদেরকে অবশ্যই জেনে বুঝে তারপরই দেখতে হবে। এমন অলীক সব স্বপ্ন দেখা যাবেনা, যেটা আমাকে অপরাধের মুখোমুখী নিয়ে দাড় করাতে পারে। প্রতারণার ফাঁদে ফেলে জীবনকে অন্ধকার করতে পারে।
জীবনে অনেক বড় স্বপ্ন দেখুন, সেসব পূরণের জন্য জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সংগ্রাম করে যান সঠিক উপায়ে। আপনার স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব শুধুই আপনার। অন্য কেউ যখন সেটা পূরণ করতে যাবে, মনে রাখবেন- সে হয়তো তারই স্বপ্ন পূরণ করার জন্যই আপনাকে বেছে নিচ্ছে। এখানে একটা জটিল সমীকরণ আছে। একটু বিষদভাবে ভাবতে হবে।
কিন্তু এটুকু অন্তত বুঝতে শিখুন- আপনার নিজের স্বপ্নটা প্রথমত একান্তই নিজের। যদি হুট করেই অন্য কেউ সেটা আপনার হাতে দিয়ে দিতে চায়, যেটা আসলে এত সহজে হাতে আসার কথা নয়। তাহলেই দাড়ান! একটু চিন্তার দরজা খুলে খোলা আকাশের দিকে তাকান। কিছু প্রশ্নের উত্তর ঠান্ডা মাথায় ভেবে বের করুনঃ যদি কোনো সদুত্তর খুজে পান, তাহলে এগিয়ে যান, যদি না পান, আবার ভাবুন , যদি তাও না পান। স্টপ-
একটা জিনিস মাথায় রাখুন- আপনি আমি কেউই কোন ধরণের ব্যক্তি স্বার্থ ছাড়া কোনো কার্য সম্পাদনে অগ্রসর হইনা।
যদি সেটা হয় বাবা মায়ের ভালোবাসাও। বাবা মা সন্তানকে ভালোবেসে মানসিক শান্তি উপভোগ করে। ভালোলাগা কাজ করে। আর এজন্যই সন্তানকে ভালোবাসে।
যেখানে বাবা মা সন্তানের ভালোবাসার মধ্যেও কিছু একটা স্বার্থ আছে। হোক সেটা আর্থিক বা মানসিক। সেখানে পুরো স্বার্থপর দুনীয়া থেকে বিনা স্বার্থে কিছু পাওয়ার আকাঙ্খা পোষন করাও অন্যায়। নিজের যেটুকু আছে সেটুকু নিজ স্বামর্থ্যে গড়ে তোলার চেস্টা অব্যাহত রাখুন।
বিশ্বাস করুনঃ যা দেখেন, না দেখেন। কিন্তু বিশ্বাস করার পেছনের যুক্তিগুলোও বুঝুন, জানুন। কারণ পৃথিবীতে এমন অনেক কিছুই রয়েছে। যেখানে বিশ্বাসের ভুমিকা অপরিসীম।
অন্ধবিশ্বাসের পর্যায়গুলো বিবেচনা করুন। না জানলে জানার উপায় বের করুন। নিজের সেইফটির কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহন করুন। এরপরেও মানুষ ভুলের নূন্যতম উর্ধ্বে নয়। ভুল করা মানুষের সহজাত বৈশিষ্ঠ্য। তবুও ভুলের পরিমান এমন লেভেলেই রাখার চেস্টা করা উচিত। যেখান থেকে একচুয়ালি উঠে দাঁড়ানো যায়। একেবারেই যেনো হারিয়ে যেতে না হয়। প্রয়োজনে সন্তুষ্ট হবার শক্তি বাড়ান। তবুও ভুল পথে যেনো পা বাড়াতে না হয়।
শাকিল আহমেদ।
সাপ্লাই চেইন ম্যানেজার, প্রিয়শপ ডটকম লিমিটেড।