Thursday, April 28, 2022
প্রিয়শপের কাছ থেকে পাওয়া ঈদের ভালোবাসা। Token of Love from Priyoshop.com Ltd.
Wednesday, April 27, 2022
আমার হৃদয় শুধু একটা সকাল চেয়েছে। সুন্দর সকাল। দোয়েল ডাকা ভোর। বৃষ্টি ভেজা স্নিগ্ধ ভোর!
শালিকের ডাক শুনতাম নিয়মিত। প্রত্যেক সকালে দোয়েলের ডাকে ঘুম ভাঙতো। অনেকবছর হয়েছে দোয়েলের ডাক শুনিনা। ভুলেই গেছি প্রায়। দোয়েলের ডাক কেমন হয় মূলত। পাখিটা খুবই পছন্দের রঙ নিয়ে ঘুরাফেরা করতো। কালো আর সাদার একটা দারুণ মিশ্রন। আমার কাছে বেশ ভালোই লাগতো। বসন্তের কোকিলের ডাক ভীষন প্রিয় ছিলো। হঠাত করে দূর থেকে কোকিলের মধুর সুর কানের মধ্যে প্রবেশ করতো প্রচন্ড গতিতে। মূহুর্তেই নিজের মুখ থেকেও সেই শব্দ বের হয়ে আসতে চাইতো, কোকিলের মতো। গরমের মধ্যে বাতাসের তীব্র মিশ্রন একটা অন্যরকম পরিবেশ হয়ে চারিদিকে ঘুরপাক খেতো। নানারকম ফুলের-ফলের গ্রান ভেসে আসতো বাতাসে। আনমনে হেটে বেড়ানো রোদমাখা দুপুর সবুজ গাছের ছায়ার সন্ধান করতাম কিছুক্ষনের জন্য।
আমের মুকুলের ঘ্রান ছড়িয়ে পড়তো পুরো গ্রাম জুড়ে। ঝিঝিপোকার ডাকে অত্যাচারিত হয়ে মনে হতো কানের মধ্যে তুলো দিয়ে রাখলে কি এই ভয়ংকর শব্দ থেকে পরিত্রান পাওয়া যায় কিনা! আমগাছ, সুপারিগাছের শরীর জুড়ে লেপ্টে থাকতো অনেক ঝিঝিপোকার কঙ্কাল, যারা গত রাতেই কিংবা মধ্য দুপুরে চিৎকার করতে করতে জীবন দিয়েছে। এরা কেনো মারা যায় আমার সে সম্পর্কে ধারণা নেই, কখনো এটা নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ হলে অবশ্যই করবো, ইচ্ছা আছে। পৃথিবীতে প্রায় ৯০০শ টিরও বেশি প্রজাতির ঝিঝিপোকা চিহ্নিত করা হয়েছে।এরা মূলত নিশাচর এবং উচ্চ শব্দে গান গাইতে থাকে, আর এই কাজটা মূলত করে থাকে পুরুষ ঝিঁঝিঁ, নারী ঝিঁঝিঁকে কাছে টানার জন্য এটা একটা কৌশল বটে।
বর্ষায় ব্যাঙের ডাক শোনা যেত বৃষ্টি থামার পরেই কিংবা বৃষ্টি চলাকালীন সময়ে। আকাশ ভেঙে মেঘের গর্জন যেনো সব কোলাহল থামিয়ে দিতো মুহুর্তেই। অন্ধকারচ্ছন্ন আকাশ দিনের সূর্যকেও লুকিয়ে ফেলতো অনায়াসেই। মাঝেমধ্যেই আমার মনে হতো আকাশের এক প্রান্তে ঘর বাধি। যেইখানে দেখা যাচ্ছে সবুজের সমারোহ, আকাশকে ছুঁয়ে রেখেছে নিজেদের মতো। এমন বন্ধুত্বপূর্ণ প্রেম দেখা যায়না সচরাচর।
কোলাহল মাখা জীবনের বসন্তগুলো ফুরিয়ে যায় নিয়মিত একটু একটু করে। আমার চাঁদ দেখা নিস্তব্ধ রজনীর সেই সুন্দর সময়গুলো স্মৃতিচারণ করে কাটাতে হয়! কি সুন্দর মনোরম ছিলো সেই দৃশ্য। মনের জানালা খুলে রাখি যত্ন করে। কাক ডাকা ভোর কিংবা দোয়েলের ডাকে যদি আবার ঘুম ভাঙে কখনো। কখনো যদি টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে গুন গুন করে পছন্দের কবিতার লাইন পাঠ কিংবা এলোমেলো গানের লাইনে সুর তোলার চেষ্টা করতে পারি! আবার কখনো এমন সময় আসবে কী! জানা নেই।
কাঁচা আমের এক ধরণের গন্ধ আছে। ফুলের গন্ধের মতো নির্মলতা না থাকলেও একটা পরিচিত ঘ্রান। মনে রাখার মতো ঘ্রান। টুপটাপ শব্দ করে যখন গাছের পাতা থেকে চুইয়ে চুইয়ে পুকেরের জলে বৃষ্টির পানি অনবরত পড়তে থাকে, বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরেও। কানে লেগে থাকে সেই শব্দ। রিমঝিম শব্দ।
বাতাসের জন্য যে সকল কবিতা, গান রচিত হয়েছে, তার সবই সুন্দর। বাতাস কখনো দেখতে পারিনাই চোখে। তবু হেমন্তের কিংবা গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় ছুটে আসা বাতাস দেহ ছুঁয়ে যাওয়ার সময় যে আকূলতা নিয়ে হৃদয়ে ঢেউ তুলে যায়, কিংবা শীতের সকালের উত্তর প্রান্ত থেকে ধেয়ে আসা কঠিন বাতাস ঝাঝরা করে দেয় কলিজা, অথবা বৃষ্টি হবার পূর্ব মুহুর্তের এক মধুর হিমশীতলতা। সবকিছুতেই মুগ্ধতার ছোঁয়া।
এসব কিছুই জীবনের অবিচ্ছ্যেদ্য অংশ। এসব নোনাজল, কাদামাটি,মাটির ঘ্রান, নদীর ঢেউ, বর্ষায় দুই পাড় ঢুবে যাওয়া পুকুরের শুনশান নিরবতা, ধানের শীষে ভাসতে থাকা আবেগ, রাতের গভীরে দূর থেকে ভেসে আসা শিয়ালের ডাক। সব, এমন হাজারো ছোটবড় বিষয়গুলো জীবনে জড়িয়ে রয়েছে পুরোনো বাড়ির শ্যাওলা জমা উঠোন কিংবা দেয়ালের মতো। এসব ফেলে দিতে হয়না, ফেলতে নেই!
আমাদের শহর গড়ে উঠেছে, হাজার বছরের ঐতিহ্য আবেগ অনুভুতিকে মাথায় নিয়ে। অথবা শহর গড়ে উঠেছে ইট পাথরের কর্পোরেট ছোঁয়ায়। আমরা উন্নত হচ্ছি, এগিয়ে যাচ্ছি, বড় হচ্ছি, স্বপ্নের সীমারেখা আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে নিয়মিত। পৃথিবীর বয়স বাড়ে। আমাদের সভ্যতা, সংস্কৃতির পরিবর্তন, পরিমার্জন ঘটে। আমরা মানুষ হতে চাই, অথবা মানুষের মতো নিজেদেরকে উপস্থাপন করি।আমাদের মিথ্যে মুখোশ পরিহিত থাকে। জয় পরাজয় নিয়ে চিন্তিত হই। আমরা বিপ্লব চাই। ঘরের কোনে বন্ধি হই। হাতের মুঠোয় পৃথিবীকে নিয়ে দিব্যি চায়ের কাপে ঠোঁট রাখি। গল্পে আড্ডায় মেতে উঠি। প্রকৃতির মতো করে প্রেমিক প্রেমিকার চোখে চোখ রাখি। হারিয়ে ফেলি নিজেদেরকে। স্বপ্নের ঘোরে কত কিছুই বলি। কত দিবা স্বপ্ন দেখি। একদিন সব হবে বলে সুখ কুড়াই, বা আক্ষেপ জমিয়ে রাখি।
এতকিছু করেও আমরা মাঝেমধ্যেই মানুষত্ব্য নামক কঠিন এবং অপরিহার্য বিষয়কে ভুলে যাই। পথে পথে দাঙ্গা তৈরি করি। মানুষকে কষ্টের মধ্যে রেখে নিজেদের উল্লাসে মেথে উঠার সমস্ত সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে যাই। গবেষনায় খরচ করি- মানুষ বাঁচানোর চেয়ে কিভাবে দ্রুত মেরে ফেলা যায়, প্রতিনিয়ত কষ্টের মধ্যে রেখে, সেটাই গবেষনা করে যাই। অথচ, আমরা কত সুন্দর ছিলাম। কত ভালো ছিলাম। আমরা তো ভালোই থাকতে চাই একটুখানি, আর বেশি কিছু তো চাওয়ার নেই এক জীবনে!
আমি বহুবার মন খারাপ করে একা একা হেটেছি, রাতের আলোয় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি। পানিতে দুলতে থাকা ঢেউয়ের সাথে কথা বলেছি। বারবার আমার হৃদয় শুধু একটা সকাল চেয়েছে। সুন্দর সকাল। একদম পুরোনো দিনের সেই দোয়েল ডাকা ভোর। বৃষ্টি ভেজা স্নিগ্ধ ভোর!
Sunday, April 24, 2022
প্রতি মূহুর্তে এই পৃথিবীতে থেকে কেউ না কেউ বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছেন। চলে যাওয়ার লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ।
প্রতি মূহুর্তে এই পৃথিবীতে থেকে কেউ না কেউ বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছেন। এবং আমরা প্রত্যেকটা মানুষ হসপিটালের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার মতো পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার যেই লম্বা লাইন রয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু কেউ জানিনা- আসলে আমাদের লাইনের সামনের দিকে কতজন মানুষ রয়েছে, যারা শেষ হয়ে গেলেই আমাদের ডাক পড়বে। এটাও জানিনা আমাদের পিছনের দিকে কত মানুষ রয়েছে!
শুধুমাত্র একটা জিনিসই জানি, সেটা হচ্ছে এই লাইনের বাইরে কেউ যেতে পারবেনা, না পিছনের দিকে, না; সামনের দিকে । যতক্ষন পর্যন্ত আমার সামনের স্থান ফাঁকা না হচ্ছে, ততক্ষন সেখানেই স্থির থাকতে হবে।
আমরা যেহেতু এই একটা চিরন্তন লাইন থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে নিতে পারবোনা, বা কোনো সুযোগই নেই এই লাইনের বাহিরে কোথাও নিজেদেরকে আড়াল করে রাখা। সেক্ষেত্রে যতক্ষন সময় আমরা অপেক্ষমান একজন সদস্য হিসেবে আছি। নিজেদের সেই সময়টুকুর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আরেকটু সুন্দর থাকা, আরেকটু নিজেদেরকে পরিপাটি করে নেয়া উচিত।
আমরা যখন লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, তখন আমাদের প্রতিটা মূহুর্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রায়োরিটি লিস্ট থাকবে, যেটা সবার আগে শেষ করতে হবে। সময়কে কাজে লাগাতে হবে। পৃথিবীর জন্য যে উপহার আমি রেখে যাবো, সেটা সবার জন্য যেনো কাজে লাগে।
কারো মুখে যেনো আমার দ্বারা হাসি ফুটে, সে যেন ভালো থাকে এটা নিশ্চিত হওয়া। অন্তত আমার দ্বারা কেউ যাতে কষ্ট না পেয়ে থাকে।
মানুষকে ভালোবাসতে শুরু করতে হবে। ভালোবাসার মতো মহান আর কি আছে!
শান্তি, ভালোবাসায়, নিজের জীবনকে পরিপূর্ণ করে নিন, আশেপাশে যারা রয়েছে, তাদের মাঝেও ছড়িয়ে দিন।
নিজেকে এবার তৈরি করে নিন, কোনো লেনাদেনা যেনো না থেকে এই ক্ষনস্থায়ী পৃথিবীর সাথে। যারা বলে এই পৃথিবী স্থায়ী, তাদের কাছ থেকে দূরে রাখুন নিজেকে। এমনভাবে তৈরি হয়ে উঠুন, যেনো- কোনো অপরাধবোধ নেই নিজেকে নিয়ে।
বেঁচে থাকার জন্য আমরা মানুষ যে পরিমান কষ্ট করি, যুদ্ধ করি। অথচ বেঁচে থাকাটা চূড়ান্ত উদ্দেশ্য নয় আমাদের। বেঁচে থাকাটা হচ্ছে একটা এডিশনাল গিফট আমাদের জন্য। আমরা নিজেরাই যেহেতু নিজেদের জীবন উপহার হিসেবে পেয়েছি, এটাকে আদর যত্নে অন্য মানুষদের জন্যও কিছু উপহার তৈরি করে রেখে কিভাবে দূশ্চিন্তা মুক্ত হয়ে পৃথিবী থেকে চলে যাবার চূড়ান্ত লাইনে দাড়াতে পারবো, সেই প্রত্যাশাই থাকুক।