তুমি ভুলে যাবার অনুমতি চাইলে, আমি চুপ করে রইলাম। তুমি অনুমতি না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেলে। তোমার চলে যাওয়া দেখতে দেখতে সন্ধ্যা নেমেছিলো। তুমি চলে যাবার পরেই মেঘ করেছিলো আকাশে। সন্ধ্যা নামতেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি শুরু হলো। ঝুম বৃষ্টি। অঝোড় ধারায় বৃষ্টি শেষে হঠাত করেই থেমে গেলো পুরো শহর। নিস্তব্দ হয়ে গেলো এক নিমিশেই। আমি হাতের সিগারেট শেষ করে ক্ষুদা নিয়েই ঘুমাতে গেলাম। ঘুম হয়নি সে রাতে। শুধু বারবার ভেসে উঠেছিলো তোমার কাজল কালো আঁখি দুটো। কি মায়াবী চোখ। অথচ আজকে তুমি চোখ মুখ শক্ত করে ভুলে যাবার অনুমতি চাইছো! আসলে কাউকে ভুলে যাবার জন্য এভাবে অনুমতি চাওয়াটা আমার কাছে নতুন লেগেছিলো। জানিনা এর আগে কেউ কারো কাছে চেয়েছিলো কিনা!
এরপর কেটে গেলো অনেকট সময়। আমি সে শহর ছেড়ে চলে গেলাম অন্য শহরে। আমাদের যোগাযোগ নেই বহুদিন, প্রায় ১৭ বছর হতে চললো। নিজের সকল পরিচয় গোপন করে বাঁচতে লাগলাম যাযাবরের মতো। তুমি চিঠি লিখেছিলে এর মাঝে। আমার ঠিকানায় চিঠি পৌছেছিলো ঠিকঠাক। কিন্তু কোনো উত্তর পাওনি। কারণ সে চিঠিগুলো আমার হাতে পৌছায়নি। আর আমার হাতে এলেও, উত্তর পেতে না। একবারের জন্যও আমার কখনো জানতে ইচ্ছে হয়নি তুমি কেমন আছো। কি করছো, বা কোথায় আছো! আমার এসব কোনোকিছুই জানার আগ্রহ জন্মায়নি। যাযাবরের জীবনকে এত আপন লাগতেছিলো। কিন্তু হঠাত করেই বুকের ব্যথাটা বেড়ে গিয়েছে বেশ কিছুদিন হলো।
তুমি ভুলে যাবার অনুমতি কেনো চেয়েছিলে ? তা তো বলে গেলেনা! আমি কি তোমাকে অনুমতি দেইনি বলে ভুলতে পারো নি? আসলে কি সহজে কাউকে ভুলে থাকা যায়? পেরেছো কী!
বলেছিলাম বুকের ব্যথাটা বেড়েছে। এর আগে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বলেছিলো কবিরাজ। ওষুদপত্র দিয়েছিলো কিছু। ঠিকঠাক ওষুদ খেতেও আমার সহ্য হয়না।
আজ এখানে আবার বৃষ্টি নেমেছে বহুদিন পরে। এই শহরের মানুষগুলো বড্ড ব্যস্ততায় সময় পার করে। কেউ কাউকে দেখার সুযোগ নেই। দোতলা বাড়ির ছাঁদে বসে আছি। শ্যাওলা জমে একাকার। বাড়িতে কেউ থাকেনা আজকাল। ভদ্র লোকের দুই ছেলেই লন্ডনে থাকে। এক মেয়ে, জামাই সহ আমেরিকায় থাকে। একজন কেয়ারটেকার বাড়ির পাহারা দেয়। নিজের অন্য একটা বাড়িতে স্বামী স্ত্রী দুজনে থাকে। দোতলা বাড়িতে চারটে রুম সম্ভবত আছে। আমি একটা রুমে থাকি। বিদ্যুতের সমস্যা হয় প্রায়ই। পানির সমস্যা খুব একটা হয়না। তবে যেটুকু হয় তাতে মানিয়ে নেয়া যায়। ভাড়া তুলনামূলক কম দিয়েই চলতে পারি।
কিছুদিন হলো মনেহচ্ছে আলোবাতাস ছেড়ে চলে যেতে হবে অন্ধকারে। খুব একা লাগছে নিজেকে। শক্তিহীন হয়ে পড়ছি দিন দিন। কোনো কাজেই আর মন বসছে না।
ভালোবেসেছিলে কি আমাকে? জীবনে ভালোবাসা ছেড়ে যাওয়ার অসহায়ত্ব কি ভয়ংকরভাবে মানুষকে স্তব্দ করে দিতে পারে। আজকে সম্ভবত কিছুটা উপলব্ধি করতে পারছি। আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। ক্ষমা করো আমাকে। ভালোবাসলে ধরেও রাখতে হয়। পারিনি হয়তো। এই অপরাধবোধ আমাকে শেষমেশ শেষ করেই দিবে। অন্ধকার বেড়েই চলছে। আজকের আকাশে কি চাঁদ নেই?
#ভালোবাসারঅনুভূতি
লিখাঃ শাকিল আহমেদ রেদওয়ান
২৫ এপ্রিল ২০২৩
No comments:
Post a Comment